প্রকাশিত: ০৫/০৬/২০১৮ ৯:৪৭ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:০৯ এএম

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক অাশ্রয় এখন বাংলাদেশের জন্য বিষফোড়ায় পরিনত হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে হিমশিম খেয়ে টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে বাংলাদেশ।
মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা উখিয়া-টেকনাফসহ অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী সহ মোট ২০ টিরও অধিক অাশ্রয় শিবিরে এখন পর্যন্ত প্রায় ১১লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি পরিমাণ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। তাতে এরই মধ্যে সেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা রকম পরিবেশ বিপর্যয়কর পরিস্থিতি।
বিশেষ করে এবারের রোহিঙ্গার ঢলে যে এলাকাগুলোতে শরণার্থীরা আশ্রয় গ্রহণ করেছে, সেগুলো মূলত সীমান্ত এলাকার প্রাকৃতিক বন ও পাহাড়ি এলাকা।
সেখানে বন্যহাতির অভয়ারণ্যসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রয়েছে, যেগুলো শরণার্থীদের কলরবে এখন ক্ষণে ক্ষণে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। শুধু হুমকির মুখেই বা বলছি কেন? এরই মধ্যে সেখানে গেলে দেখা যাবে সেখানকার অনেক প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয় হয়ে গেছে।

সেখানে বন-জঙ্গল কেটে সাফ করে পাহাড় কেটে মাটি সরিয়ে তাঁবু টানিয়ে বসতি স্থাপন করছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। একই সঙ্গে এতগুলো মানুষের আনা-গোনা, চলাফেরা, বসতি স্থাপন তাও আবার অল্প দু-একটি উপজেলার সামান্য একটু স্থানে সংকুলান করা সহজ কথা নয়।
রোহিঙ্গাদের তাদের দেশ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক মারাত্মক নির্যাতনের কারণে তারা দলে দলে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার তাদের মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে। সেটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত ও মানবিক অাশ্রয়। কিন্তু তাদের জন্য উখিয়া-টেকনাফের হাজারো বছরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য যে সংকট অার সমস্যার মধ্যে পড়েছে। এই সমস্যাকে এখনই বিবেচনায় নিয়ে আসতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে তা আরো ব্যাপক ক্ষতির দিকে চলে যাবে।

কক্সবাজার এলাকাই হলো দেশের জন্য একটি পর্যটনময় এলাকা ও গৌরবের বিষয়। কারণ, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ও দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আমাদের দেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। তা ছাড়া অতিসম্প্রতি বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ভাবনাটাও ঠিক। সেই একই জায়গাজুড়ে এখন মানবিক সংকট অার পরিবেশ বিপর্যয়। সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে পর্যটনকে আরো আকর্ষণীয় করার মানসে ৮০ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক চালু করেছেন। জায়গাটা একপাশে দীর্ঘ সাগর অন্য পাশে পাহাড় ও সবুজবেষ্টনী।

এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়ের জন্য সেই সবুজ পাহাড় ও বন কেটে সাবাড় করে, বন্যপ্রাণীদের অাশ্রয়স্থল ধ্বংস করে রোহিঙ্গাদের জন্য বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। যদিও জাতীসংঘ ও বিভিন্ন অান্তর্জাতিক মাধ্যমে বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যেই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস তা বলে ভিন্ন কথা।

দীর্ঘ ৩০ বছরেও এ রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো সমাধান তো হয়ইনি! বরং পূর্ব থেকে বাংলাদেশে অাশ্রয়ে তাকা পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে নতুন করে অাশ্রয় নিয়েছে আরো পাঁচ লক্ষাধিক শরণার্থী। যা সব মিলে ১১লাখ ৭৫ হাজারের বেশি। যা এখনো থামছে না, বরং দিন দীর্ঘ হচ্ছে এই মানবিক সংকট। এভাবে চলতে থাকলে তা কোথায় এসে দাঁড়াবে, তা অনুমান করা কঠিন এক অংক।

রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনেই পানি সংকট মোকাবেলার জন্য বসানো হচ্ছে গভীর ও অগভীর নলকূপ, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য বসানো হয়েছে কয়েকশত হাট-বাজার, রান্না-বান্নার জন্য বসানো হচ্ছে চুলা। সেসব চুলায় রান্নার জন্য প্রয়োজন লাকড়ি ও জ্বালানি। আর সেসব লাকড়ি-জ্বালানির জন্য দিন দিন উজাড় করছে হাজার হাজার একর প্রাকৃতিক বন-জঙ্গল ও বন্যপ্রাণীদের অাশ্রয়স্থল।
শুধু লাকড়ি-জ্বালানি নয়, তাঁবু তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে সেসব বনের বাঁশ-কাঠ। তাতে একদিকে বন-পাহাড় কেটে বাসস্থান তৈরি করা হচ্ছে, অন্যদিকে সেসব বাসস্থানের মানুষের প্রয়োজনে আবার উজাড় করা হচ্ছে প্রকৃতিক বন-জঙ্গল, সর্বোপরি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।

সাম্প্রতিক গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছে , হাতিসহ অন্য সব বন্যপ্রাণীরা খাদ্য সংকট ও অাশ্রয়স্থলের অভাবে ‘অভয়ারণ্য ছেড়ে বাইরে চলে আসছে, যা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে অনেক। এতে একদিকে যেমন বন্যপশুদের নিরাপত্তার সমস্যা হয়, তেমনি অন্যদিকে সেসব লোকালয়ের মানুষকেও নানামুখী সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করার কোনো চক্রান্ত শুরু হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কারণ দেখা যাচ্ছে, ঠিক যে সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিষয়টিকে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে, সেটা রোধ করার জন্য বিশ্বজনমত একীভূত হয়েছে। ঠিক তখনই আবারও মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবিক নির্যাতন করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট কোনো অবস্থাতেই ভালো লক্ষণ বহন করে না বাংলাদেশের জন্য।

লেখক: রফিক মাহমুদ
সংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...